বিদ্যালয় কর্তৃক গৃহীত কর্মপরিকল্পনা
সরকারের শিক্ষা কারিকুলাম বাস্তবায়ন করে নিরক্ষর জনগোষ্ঠীকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরের লক্ষ্যে শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি করতে হবে। শিক্ষাকে শ্রেণিকক্ষের নির্দিষ্ট গন্ডির মধ্যে আবদ্ধ না রেখে আলোর মতো ছড়িয়ে দিতে হবে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে। বিদ্যালয়ের শিক্ষাদান পদ্ধতি হতে হবে আধুনিক যুগোপযোগী এবং বিজ্ঞান সম্মত। শিক্ষার্থীদের কোয়ালিটি বৃদ্ধি করে ১০০% ফলাফল অর্জন করাই হবে প্রতিষ্ঠানটির মুখ্য উদ্দেশ্য। উপজেলা, জেলা ও জাতীয় পর্যায়ে প্রতিষ্ঠানটির সুনাম বৃদ্ধির লক্ষ্যে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, ম্যানেজিং কমিটি এবং সর্বস্তরের এলাকাবাসীকে নিরলসভাবে কাজ করতে হবে।
১০০% ফলাফল অর্জনের লক্ষ্যে গৃহীত পরিকল্পনা
ছাত্র–ছাত্রীদের ব্যক্তিগত নথি সংরক্ষণঃ প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রীদের ব্যক্তিগত নথি সংরক্ষণ করতে হবে। নথিতে শিক্ষার্থীর নাম, ঠিকানা, অভিভাবকের সাথে যোগাযোগের নাম্বার, পাঠ্য বিষয়, ফটো, আচরণ এবং পাঠ উন্নতির অগ্রগতি লিপিবদ্ধ করে বিদ্যালয়ে সংরক্ষণ করতে হবে যাতে প্রয়োজনের সময় বিদ্যালয় কর্তৃক অভিভাবকের সাথে যোগাযোগ করা যায়।
ছাত্র–ছাত্রীদের ডায়েরী ব্যবহারঃ প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রীর জন্য বিদ্যালয়ের নামে ছাপানো ডায়েরীর ব্যবস্থা থাকবে। ডায়েরীতে শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন ক্লাসের পাঠ শিরোনাম এবং বাড়ির কাজ লিপিবদ্ধ করবে। প্রয়োজনে শিক্ষক, শিক্ষার্থীর পাঠের অগ্রগতির ব্যাপারে ডায়েরীতে লিখিতভাবে অভিভাবককে জানাবেন। ডায়েরীতে প্রত্যেক শিক্ষকের নাম ও মোবাইল নাম্বার থাকবে। অভিভাবকগণের কোন মন্তব্য, পরামর্শ কিংবা কোন অভিযোগ থাকলে তা ডায়েরীতে লিখে প্রধান শিক্ষককে অথবা শ্রেণি শিক্ষককে জানাবেন।
ছাত্র–ছাত্রীদের উপস্থিতি বৃদ্ধিঃ প্রতিদিন যাতে ক্লাসে সর্বোচ্চ সংখ্যক শিক্ষার্থী উপস্থিত থাকে সে বিষয়ে প্রত্যেক শিক্ষককে আন্তরিক থাকবেন। শ্রেণি শিক্ষক শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতির বিষয়ে প্রধান শিক্ষককে লিখিতভাবে অবহিত করবেন। প্রয়োজনে প্রধান শিক্ষক অভিভাবকের সাথে যোগাযোগ করবেন।
সহশিক্ষা কার্যক্রমঃ শিক্ষার্থীদের পাঠের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য বিদ্যালয়ে নিয়মিত সহশিক্ষামূলক কার্যক্রম চালু থাকবে। প্রত্যেক শিক্ষক সহশিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়নে নিজ থেকে উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।
দেয়ালিকাঃ শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল প্রতিভা বিকাশের লক্ষ্যে এবং চিন্তন দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বিদ্যালয়ে মাসিক দেয়ালিকার ব্যবস্থা থাকবে। দেয়ালিকা বাস্তবায়নের জন্য শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সমন্বয়ে ১০ সদস্যের একটি কমিটি থাকবে। কমিটি শিক্ষার্থীদের থেকে লেখা আহবান করবে, শিক্ষার্থীদের জমাকৃত লেখা যাচাই-বাছাই করবে এবং তা দেয়ালিকায় প্রকাশের ব্যবস্থা করবে।
লাইব্রেরী ব্যবস্থাঃ শিক্ষার্থীদের পাঠ্যাভ্যাস বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিদ্যালয় চলাকালীন সময়ে লাইব্রেরী ব্যবস্থা উন্মুক্ত থাকবে। শিক্ষার্থীরা অবসর সময়ে সেখানে গিয়ে পড়ালেখা করবে। এ বিষয়ে সহকারী শিক্ষক (গ্রন্থাগার ও তথ্য বিজ্ঞান) সার্বিক দায়িত্ব পালন করবেন। তাছাড়া শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের লাইব্রেরী থেকে নিয়মিত বই নিয়ে যেন বাড়িতে লেখাপড়া করতে পারে সে বিষয়ে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সদা সচেষ্ট থাকবেন।
বিজ্ঞান ক্লাবঃ শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানমনস্ক করার লক্ষ্যে বিজ্ঞান শিক্ষকের নেতৃত্বে বিদ্যালয়ে বিজ্ঞান ক্লাব প্রতিষ্ঠা করা হবে। বিজ্ঞান ক্লাব সপ্তাহে বা মাসে একবার বিজ্ঞান বিষয়ক কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করবে। এতে শিক্ষার্থীদের জ্ঞান অর্জনে সহায়তা হবে।
Language Club: শিক্ষার্থীদের ভাষাগত দক্ষতা বৃদ্ধি এবং ভয়ভীতি দূর করার জন্য বাংলা ও ইংরেজি শিক্ষকগণের নেতৃত্বে বিদ্যালয়ে একটি Language Club প্রতিষ্ঠা করা হবে। শিক্ষার্থীরা যাতে উন্মুক্তভাবে উভয় ভাষা চর্চা করতে পারে সে বিষয়ে শিক্ষকগণ সার্বিক সহযোগিতা করবেন।
ডিবেটিং ক্লাবঃ ছাত্র-ছাত্রীদের নেতৃত্বদানের উপযোগী করে গড়ে তোলার জন্য বিদ্যালয়ে ডিবেটিং ক্লাব প্রতিষ্ঠা করা হবে। এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ সার্বিক দায়িত্ব পালন করবেন।
Problem solving session চালু করনঃ বিষয় ভিত্তিক ছাত্র-ছাত্রীদের সমস্যা সমাধান করার জন্য বিদ্যালয়ে problem solving session চালু করা হবে।শিক্ষার্থীরা অভিজ্ঞ শিক্ষকমণ্ডলী থেকে তাদের সমস্যা সমাধান করে নিবে। শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ সর্বদা আন্তরিক থাকবেন।
পরীক্ষা ব্যবস্থাঃ পাবলিক পরীক্ষায় ১০০% ফলাফল অর্জনের জন্য নিয়মিত পরীক্ষার বিকল্প নেই। বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক প্রতি সপ্তাহে ক্লাসটেস্ট নিবেন। শিক্ষার্থীদের ক্লাসটেস্টে প্রাপ্ত নাম্বারে ২০% বার্ষিক পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের সাথে যোগ করে মেধাস্থান নির্ধারণ করা হবে। এতে শিক্ষার্থীরা ক্লাসটেস্টে অংশগ্রহণ করতে আগ্রহী হবে এবং পরীক্ষার গুরুত্ব বৃদ্ধি পাবে।
মাসিক মূল্যায়ন পরীক্ষাঃ বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক একমাসে কতটুকু পড়াবেন তা মাসের শুরুতে শিক্ষার্থীদের জানিয়ে দিবেন। মাসব্যাপী শিক্ষক ক্লাসে ঐ নির্ধারিত পড়াগুলি পড়াবেন। মাস শেষে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মাসিক মূল্যায়ন পরীক্ষার ব্যবস্থা করবেন। এজন্য শিক্ষার্থীদের থেকে ন্যূনতম পরীক্ষার ফি নেওয়া যেতে পারে।
মডেল টেস্টঃ প্রতি তিন মাস পর বিদ্যালয়ে মডেল টেস্ট নেওয়ার ব্যবস্থা চালু করা হবে। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি শিক্ষকগণের সাথে পরামর্শ করে মডেল টেস্টের ফি নির্ধারণ করবেন। মডেল টেস্টে প্রাপ্ত নাম্বারের ৩০% বার্ষিক পরীক্ষায় প্রাপ্ত নাম্বারের সাথে যোগ করে মেধাস্থান নির্ধারণ করা হবে। এতে শিক্ষার্থীরা পড়ালেখার প্রতি গুরত্ব দিবে এবং পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে।
হোস্টেল ব্যবস্থাঃ পাবলিক পরীক্ষায় বিদ্যালয়ের ফলাফল ভাল করার জন্য ৮ম এবং ১০ম শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বছরের একটা নির্দিষ্ট সময় থেকে দিবা/রাত্রি কালীন সময়ে বিদ্যালয়ে রেখে শিক্ষকবৃন্দের তত্ত্বাবধানে পড়ালেখার ব্যবস্থা করা হবে।
গাইড টিচার ব্যবস্থাঃ শিক্ষার্থীদের সার্বক্ষণিক তদারকির জন্য বিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ গাইড টিচারের দায়িত্ব পালন করবেন। প্রত্যেক শিক্ষকের দায়িত্বে নির্দিষ্ট সংখ্যক শিক্ষার্থী থাকবে। তিনি ঐ সকল শিক্ষার্থীদের যাবতীয় ব্যাপারে অভিভাবকদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখবেন।
বিদ্যালয়ে Remedial ক্লাসের ব্যবস্থাঃ দূর্বল শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার সমতা আনার জন্য মাঝে মধ্যে পিছিয়ে পড়া বিষয়ে বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে Remedial ক্লাসের ব্যবস্থা করা হবে।
মনিটরিং ব্যবস্থাঃ শ্রেণিকক্ষে পাঠদান কার্যক্রম ফলপ্রসূ ও গতিশীল করার জন্য প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্য সমন্বয়ে মনিটরিং টিম গঠন করতে হবে। বিদ্যালয়ের প্রধান/সহ-প্রধান শিক্ষক নিয়মিত শিক্ষকগণের ক্লাস মনিটরিং করবেন এবং শিক্ষকগণের মাসিক সমন্বয় সভায় তা উপস্থাপন করবেন অথবা ব্যাক্তিগতভাবে শিক্ষকগণের সাথে সমন্বয় করবেন।
শিক্ষার উপকরণ সংগ্রহঃ শিক্ষকগণ যাতে উপকরণের মাধ্যমে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করতে পারেন সে লক্ষ্যে বিদ্যালয় এবং শিক্ষকবৃন্দের নিজস্ব উদ্যোগে উপকরণ সংগ্রহ করবেন।
শ্রেণিকক্ষের পাঠদানের ব্যবস্থাঃ শ্রেণিকক্ষের পাঠদান কার্যক্রমকে শিক্ষার্থীদের শিখন উপযোগী ও বোধগম্য করার জন্য শিক্ষকগণ পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করবেন।
বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থাঃ শিক্ষক বিদ্যালয়ের প্রাণ। স্বল্পসংখ্যক শিক্ষক দ্বারা শ্রেণি কার্যক্রম সুন্দরভাবে পরিচালনা করা সম্ভব নয়। তাছাড়া বিদ্যালয়ে অতিরিক্ত ও দক্ষ শিক্ষক খুবই প্রয়োজ়ন। স্বচ্ছতার মাধ্যমে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দক্ষ শিক্ষক নিয়োগের জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
শিক্ষার্থীদের বাড়িতে বাড়িতে অভিযানঃ শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যের সমন্বয়ে টিম গঠন করে রাত্রিকালীন সময়ে মাঝে মধ্যে শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তদারকি করা হবে।
অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগঃ বিদ্যালয়ে প্রতি ৪০ জন শিক্ষার্থীদের জন্য ১ জন করে শিক্ষক থাকা দরকার। এ হিসাবে শিক্ষার্থী অনুসারে বর্তমানে শিক্ষক থাকবে ১৬ জন। অথচ বর্তমানে বিদ্যালয়ে মাত্র ০৮ জন শিক্ষক কর্মরত আছেন। বিদ্যালয়ে মানসম্মত শিক্ষাদান করতে হলে অতিরিক্ত দক্ষ শিক্ষক প্রয়োজন। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়গের ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
সমাপনী বক্তব্যঃ শাহ্ জকি উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়কে একটি মডেল বিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি, অভিভাবকবৃন্দ,শিক্ষকমণ্ডলী এবং এলাকাবাসীকে দীর্ঘমেয়াদী কাজ করতে হবে। বিদ্যালয়ের বার্ষিক কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করে তা কার্যকর করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।